গরমে শিশুর যত্ন

- আপডেট সময় : ০৩:৪৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ ৪২ বার পড়া হয়েছে

গরমে শিশুর যত্ন
আপনার সন্তানকে গরমের মধ্যে যেভাবে যত্ন করবেন
গ্রীষ্মকাল বাংলাদেশের অন্যতম উষ্ণতম ঋতু, যেখানে তাপমাত্রা প্রায়শই ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। জানবেন গরমে শিশুর যত্ন। এই সময়ে বড়দের মতো শিশুরাও বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তিতে ভোগে। তাপমাত্রার তীব্রতা, ঘাম, পানিশূন্যতা, ঘামাচি, হিট র্যাশ, ডায়রিয়া ও খাদ্যে অরুচি—এসব সমস্যা শিশুদের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ। তাই গরমে শিশুদের যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। khobor pratidin এর মাধ্যমে আমরা জানব কীভাবে এই সময়ে শিশুদের সঠিকভাবে যত্ন নেয়া যায়।
গরমকালে শিশুদের জন্য প্রধান সমস্যাগুলো
১. পানিশূন্যতা (Dehydration):
শিশুরা অনেক ঘামায় কিন্তু তারা ঠিকভাবে জানাতে পারে না যে তারা পিপাসার্ত। ফলে তারা খুব সহজেই পানিশূন্যতায় ভুগতে পারে।
২. ঘামাচি ও হিট র্যাশ:
চামড়ার ওপর ছোট ছোট লাল দানা বা ফুসকুড়ি হয়, যা চুলকানি ও অস্বস্তি তৈরি করে।
৩. হিটস্ট্রোক:
অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় শরীর তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এটি শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে।
৪. ডায়রিয়া ও খাবারের অরুচি:
গরমকালে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়, ফলে শিশুরা দূষিত খাবার খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।
গরমে শিশুর যত্নের উপায়
১. পানি ও তরল খাবার নিশ্চিত করা
- শিশুদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে হবে।
- ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুকে ঠান্ডা সেদ্ধ করা পানি, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে।
- বুকের দুধপানকারী শিশুকে নিয়মিত দুধ খাওয়াতে হবে, যেন শরীরে পানির অভাব না হয়।
২. সঠিক পোশাক নির্বাচন
- হালকা রঙের, ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড়ের জামা পরাতে হবে।
- সিনথেটিক কাপড় বা টাইট জামা গরমে অস্বস্তি তৈরি করে এবং ঘামাচির সম্ভাবনা বাড়ায়।
- রাতে শিশুকে পাতলা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ঘামতে না হয়।
৩. পর্যাপ্ত স্নান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
- দিনে অন্তত একবার ঠাণ্ডা বা কুসুম গরম পানিতে গোসল করানো উচিত।
- ঘামাচি হলে চন্দনের গুঁড়া, ক্যালামাইন লোশন বা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার্য ওষুধ লাগানো যেতে পারে।
- শিশুর জামাকাপড় প্রতিদিন পরিষ্কার করে পরাতে হবে।
৪. সঠিক খাবার খাওয়ানো
- গরমে হালকা, সহজপাচ্য ও ঘরে তৈরি খাবার শিশুকে খাওয়ানো উচিত।
- ফল যেমন: তরমুজ, বাঙ্গি, লিচু, কলা, পেঁপে—শিশুর ডায়েটে রাখা যেতে পারে।
- বাসি বা বাইরের খাবার শিশুকে একেবারেই খাওয়ানো যাবে না।
৫. রোদ থেকে বাঁচানো
- বেলা ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিশুদের বাইরে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়, কারণ এই সময় সূর্যের তেজ সবচেয়ে বেশি।
- বাইরে গেলে ছাতা, টুপি বা সানহ্যাট ব্যবহার করা উচিত।
- গাড়িতে রেখে একা কখনোই শিশুদের রাখা উচিত নয়, কারণ গাড়ির ভেতর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৬. শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Fan/AC)
- ঘরে যদি ফ্যান বা এসি থাকে, তাহলে তা সরাসরি শিশুর গায়ে না দিয়ে বাতাস ছড়িয়ে দিতে হবে।
- এসি চালালে ঘরটিকে মাঝেমধ্যে খোলা রাখা দরকার, যেন শিশুর ঠাণ্ডা না লাগে।
বিশেষ টিপস
- শিশুর ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করুন।
- শিশুর ঘুম যেন আরামদায়ক হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
- শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশু চুলকিয়ে ক্ষত না করে।
- ঘন ঘন শিশুর শরীর ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় পরিষ্কার করা যেতে পারে।
- যদি শিশু কষ্টে নিঃশ্বাস নেয়, শরীর খুব গরম হয়ে যায় বা বারবার বমি করে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
যে ভুলগুলো করা উচিত নয়
- গরমে শিশুকে মোটা জামাকাপড় পরানো
- শিশুকে বাইরের জুস বা আইসক্রিম খাওয়ানো
- দীর্ঘসময় রোদে বা গরম পরিবেশে রাখা
- শরীরে ঘাম থাকা অবস্থায় ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দেওয়া
- পানির পরিবর্তে শুধু সফট ড্রিংক বা ফ্লেভারড পানীয় খাওয়ানো
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
যদি শিশুর মধ্যে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়:
- জ্বর ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি
- বারবার বমি বা পাতলা পায়খানা
- চোখে পানি না থাকা (ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ)
- শিশু দুর্বল ও চুপচাপ হয়ে যাওয়া
- হিট র্যাশ অনেক বেড়ে যাওয়া
তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
উপসংহার
গরমকালে শিশুর যত্ন নিতে প্রয়োজন একটু বাড়তি মনোযোগ ও সচেতনতা। একটু সতর্ক হলেই আমরা আমাদের প্রিয় সন্তানকে গ্রীষ্মের প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করতে পারি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত পানি ও পুষ্টিকর খাবার, আরামদায়ক পরিবেশ এবং সময়মতো চিকিৎসা—এই সবকিছুই একটি সুস্থ ও হাসিখুশি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয়।
শিশুর সুস্থতা মানেই আমাদের শান্তি, আর শিশুর হাসিই গ্রীষ্মের সবচেয়ে শীতল অনুভূতি।
আরো পড়ুন : গরমে ত্বকের যত্ন
One thought on “গরমে শিশুর যত্ন”